স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে তাঁকে ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে ডাকেন
- আপডেট সময় : ০৭:৫৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫২২ বার পড়া হয়েছে
বাদশা মিয়ার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শানেরহাট ইউনিয়নের মেষ্টা গ্রামে। স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে তাঁকে ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে ডাকেন। তাঁর পেশা দিনমজুরি হলেও নেশা গাছ লাগানো। নিজের টাকায় রাস্তার পাশে, হাটবাজার ও গ্রামের মোড়ে, ঈদগাহ, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ২০ বছর ধরে গাছের চারা লাগিয়ে চলেছেন তিনি। এখন তাঁর লাগানো গাছের ফল খান এলাকার মানুষ। গাছের ছায়ায় বসে মনপ্রাণ জুড়ায় পথচারীরা।
কৃষকের সন্তান বাদশা মিয়া আর্থিক অনটনে লেখাপড়া করতে পারেননি। সাত বছর বয়সে তিনি মাঠে ছাগল, গরু চরানোর কাজ শুরু করেন। একটু বড় হওয়ার পর পেশা দাঁড়ায় দিনমজুরি। সংসারে তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। কৃষিজমি নেই। চার শতক জমির ওপর তাঁর বাড়ি।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে শুক্রবার এলেই ৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়া বাইসাইকেলের পেছনে গাছের চারা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ইউনিয়নের যেকোনো মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর গাছের উপকারিতা সম্পর্কে লোকজনকে ধারণা দেন। গাছের চারা উপহার দিয়ে গাছ লাগানোরও পরামর্শ দেন।
ফল কিনতে না পেরে বৃক্ষরোপণ
২০০৪ সালের নভেম্বর মাসের এক বিকেল। বাদশা তাঁর দুই সন্তান মিলন মিয়া ও লাভলি আক্তারকে নিয়ে বাড়ির পাশের রাস্তার ধারে বসে ছিলেন। ওই পথ দিয়ে আম-কাঁঠাল নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন এক ব্যবসায়ী। তা দেখে দুই সন্তান বাবার কাছে ফল খাওয়ার আবদার করেন। টাকার অভাবে সন্তানদের সেদিন ফল খাওয়াতে না পেরে বাদশা খুব কষ্ট পান। নিজের সন্তানদের কথা ভাবতে গিয়ে গরিব প্রতিবেশীর সন্তানদের কথাও মাথায় আসে তাঁর। একসময় মনে হলো, তাদের জন্য কিছু একটা করতে হবে। সেখান থেকেই ফলের গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।
পরের বছরের জুলাই মাসে শানেরহাট-বড়দরগা সড়কের পাশে ৫০টি আম ও কাঁঠালগাছ লাগান। বাদশা মিয়া জানালেন, ওই সময় দুই–তিন মাসে সড়কে ১৫০টি গাছ লাগানোর পর আর্থিক সংকটে পড়ে যান। গাছের গোড়ায় খুঁটি দেওয়ার টাকা পাচ্ছিলেন না। শেষে মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে খুঁটি দেন। স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেন, দিনমজুরি করে যে টাকা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ গাছ লাগানোর কাজে ব্যয় করবেন। স্ত্রী মিনারা বেগমও তাঁকে গাছ লাগানোর কাজে সব সময় উৎসাহ দেন।
শানেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মেছবাহুর রহমান বলেন, সরকারি রাস্তায় গাছ লাগিয়ে বাদশা মিয়া গরিব মানুষের মুখে ফল তুলে দিচ্ছেন। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য গাছের নিচে বাঁশের টং তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁর এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বৃক্ষমেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাদশাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ধরনের ভালো কাজে এগিয়ে আসায় বাদশাকে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম।
বাবার জন্য গর্ব হয় বলে জানালেন ছেলে মিলন মিয়া। তিনি বলেন, ‘এখন পুরো সংসারের ভার আমার ওপর। বাবা যা আয় করেন, সে টাকা দিয়ে গাছ লাগান। গ্রামের কারও বিপদ হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাবার কাজে আমরা খুশি।’
নিজের লাগানো গাছ থেকে লাভবান হওয়ার কোনো চিন্তা করেন না বাদশা মিয়া। তবে চান, তাঁর কাজের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম উপলব্ধি করবে, সমাজ ও পরিবেশের জন্য কিছু একটা রেখে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘গাছ অক্সিজেন দিয়ে প্রতিমুহূর্ত আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আল্লাহ তাআলা যত দিন সুযোগ দেবেন, তত দিন গাছ লাগাব। আমি বেঁচে না থাকলেও আমার গাছ বেঁচে থাকবে। মানুষকে ছায়া, ফল দেবে। তাতেই আমার সুখ

































