স্ত্রীর সেফটি-পিন দিয়ে শরীরে থেকে বুলেট বের করেছি : ভুয়া জুলাই যোদ্ধা
- আপডেট সময় : ০৭:৫৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৫৭৭ বার পড়া হয়েছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ না করেও জুলাইযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে সকল সুযোগ সুবিধা নিয়েছে এনায়েত উল্যাহ বাপ্পী (২৬) নামের এক কাঠমিস্ত্রি। নিজেকে জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সরকারি অফিস আদালতে প্রভাব বিস্তার ও মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার ১৩ মাস পর গত (১৭ সেপ্টেম্বর) এনায়েত উল্যাহ বাদী হয়ে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলার আবেদন করেন। এতে হামলা ও মারধরের অভিযোগে তিন সাংবাদিকসহ ১০৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির দিন মামলাটি প্রত্যাহার করেন। এনায়েত উল্যাহ বাপ্পী সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব সুজাপুর গ্রামের আনোয়ার আলী সারেং বাড়ির আহসান উল্যার ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালে ১৯ জুলাই ফেনী শহরের ইসলামপুর সড়কে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সে সময় পথচারী হিসেবে রাস্তা পারাপারের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন এনায়েত উল্যাহ বাপ্পী। তৎকালীন সময়ে (১৯ জুলাই ২০২৩) প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক ফেনীসময় ও তার নিজ ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত হয়। অভিযোগ উঠেছে, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর নিজেকে আন্দোলনের আহত দাবি করে এক ছাত্রনেতার সহায়তায় ফেনী সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে আহতের তালিকায় নিজের নাম লেখান। সরকার পতনের আন্দোলনে অংশগ্রহণের দাবি করে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে যান তিনি। এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গেজেট নম্বর ৪২৫, তারিখ ২৭-০২-২০২৫। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দেন। তিনি ২০২৪ সালে ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ৩০টি গুলির স্প্লিন্টার লাগার পরও ফেনীতে চিকিৎসা না নিয়ে ঘটনার ১০দিন পর ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রমাণ সাংবাদিকদের দেখাতে পারেননি তিনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট এনায়েত উল্যাহ বাপ্পীর গাযে হলুদ ছিল এবং ৫ আগস্ট আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের ডিপটি বাড়ির আবদুল হকের মেয়ে উম্মে কুলসুস তারিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। যা ছিল তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে।
সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার বেলায়েত হোসেন বেলু বলেন, ‘এক সময় কাঠমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালানো বাপ্পি এখন লাখ লাখ টাকার মালিক। এখন আর কাজ করেন না। অথচ তারই ছোট ভাই হৃদয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও গত ৮ মে মাসে আওয়ামী লীগের ফেনীতে ঝটিকা মিছিলের নেতৃত্ব দেন।’
ফেনীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম বলেন, ‘গত বছরের ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র আন্দোলনের আহত দাবি করে অনেকে মামলা করার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আসামিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাদের পরিবারের কাছে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাণিজ্য করা।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, ‘ফেনীতে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নিরপরাধ লোকদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীর কিছু ছেলে আমাদের দলের নাম ভাঙিয়ে মামলা বাণিজ্য করছে। আমরা এ ব্যাপারে সব সময় প্রতিবাদ করছি।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলনের পরপর এক ছাত্রনেতার মাধ্যমে নিজেকে আহত দাবি করে জোরপূর্বক তালিকায় নাম তুলেছেন। এ সময় তিনি শরীরের আঘাতের চিহ্ন ও ছবি দিয়েছেন। তবে তা কবের, তা যাচাই-বাছাই করা হয়নি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনায়েত উল্যাহ বাপ্পী বলেন, ‘২০২৪ সালের ৪ আগস্ট গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। আর ৫ তারিখ সাধারণভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সেদিন আহত হওয়ার পর নিজেই স্ত্রীর সেফটি-পিন দিয়ে শরীরে থেকে বুলেট বের করেছি। এখনও শরীরে স্প্লিন্টার আছে। ব্যথা বেদনা আছে। প্রথমে আত্মীয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা করি।’
পরে ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দাবি করলেও হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নাম বলতে পারেননি বাপ্পী। মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলাতে সাংবাদিকদের নাম আসায় মামলাটি নিয়ে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছে। এখন জুলাইযোদ্ধা হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে আবার মামলা করব।’
জুলাই আন্দোলনে অংশ না নিয়েও কীভাবে জুলাইযোদ্ধা হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, ‘আন্দোলনের পর তৎকালীন সিভিল সার্জন তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে হয়তো তালিকাভুক্ত করেছেন। বিষয়টি আমি জানি না।’
































