ঢাকা ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫৪৫ বার পড়া হয়েছে

কলম্বোয় অনুশীলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ছবি: সংগৃহীত

দেশবর্ণ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামীকাল কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের যাত্রা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক জানালেন, এবার তারা মানসিকভাবে আরও দৃঢ়, ব্যাটিং দুর্বলতা কাটিয়ে দলকে নতুন আত্মবিশ্বাসে গড়ে তুলতে চান। প্রথম ম্যাচেই পরিচিত প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

এবারের বিশ্বকাপে আসাটা আপনার জন্য একটু আলাদা অনুভূতি নিশ্চয়ই। ২০২২-এ অনেক কিছুই প্রথমবার হয়েছিল—প্রথম ম্যাচ, প্রথম প্রেস কনফারেন্স, প্রথম জয়। এবার দ্বিতীয়বার, কিছুটা কি সহজ মনে হচ্ছে? কেমন লাগছে এবারের টুর্নামেন্ট নিয়ে?

নিগার সুলতানা: সবচেয়ে বড় কথা, তখন থেকে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন একটা নতুন দিন, নতুন সুযোগ। আমরা চাই পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে একটা ভালো শুরু হোক। কারণ এটা আমাদের প্রথম ম্যাচ, আর এটা যদি ভালো হয়, তাহলে পুরো টুর্নামেন্টে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোনো যাবে।

প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের মতো পরিচিত প্রতিপক্ষ— এটা কি একটু সুবিধাজনক?

নিগার সুলতানা: হ্যাঁ, অবশ্যই। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। কোয়ালিফায়ারেও খেলেছি, দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও খেলেছি। ওদের সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা আছে, আমাদের সম্পর্কেও ওদের আছে। তাই এটা একটা ভালো প্রতিযোগিতা হবে বলে মনে করি।

গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে অনেক আইসিসি ইভেন্ট হয়েছে। দল হিসেবে এই ১২ মাস কেমন গেল? আর আপনি কীভাবে দলকে আবার এমন একটি বড় টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত করেছেন?

নিগার সুলতানা: দেখুন, আমরা মানসিকভাবে অনেক কাজ করেছি। কারণ আমরা জানি আমাদের দলে ম্যাচ জেতানোর মতো সামর্থ্য আছে। কিন্তু সেই বিশ্বাসটাই তৈরি করতে হতো। গত ১২ মাসে আমরা সেই বিশ্বাস তৈরিতে কাজ করেছি। আমরা ভালো খেলেছি, কিন্তু ম্যাচ জিততে পারিনি। কয়েকটা খুব কাছাকাছি ম্যাচ ছিল। এরপর আমরা ভেবেছি—কীভাবে খেললে জয় আসবে! কোয়ালিফায়ারের পর থেকেই আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক পরিশ্রম করেছি।

পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দলের বোলিং বরাবরই ভালো, কিন্তু ব্যাটিং-ই অনেক সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। ব্যাটিং ইউনিট নিয়ে কী কাজ করেছেন?

নিগার সুলতানা: সত্যি বলতে, অনেকদিন ধরেই ব্যাটিং ছিল আমাদের দুর্বলতা। বোলিং সব সময় ভালো ছিল, ফিল্ডিং-ও উন্নত হয়েছে। কিন্তু ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা পারফর্ম করতে পারিনি। সবাই বুঝেছে বিষয়টা। এরপর আমরা আলোচনা করেছি— আমরা তো পারি, তাহলে কেন পারছি না? কেন বড় স্কোর গড়তে পারছি না? এরপর আমরা কঠোর পরিশ্রম শুরু করি। নিজেদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করি—এটাই সুযোগ। কোয়ালিফায়ারে যেভাবে কষ্ট করে উঠেছি, আবার সেটা চাই না। জয় চাইলে রান তুলতেই হবে।

Jhilikঅনুশীলনে রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক

সর্বশেষ প্রস্তুতিতে কোন দিকটায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন?

নিগার সুলতানা: বিশেষভাবে স্ট্রাইক রেট নিয়ে কাজ করছি। কারণ এই ফরম্যাটে শুরুতে কেউ সময় নিয়ে খেললেও পরে গতি আনতে হয়। এখন ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে, রান না থাকলে আপনি খেলায় থাকবেন না। তাই আমরা স্ট্রাইক রেট উন্নত করেছি। এমন কিছু ব্যাটার নিয়েছি যারা স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে আবার বাউন্ডারিও মারতে পারে।

পাকিস্তানের ব্যাটিং ইউনিট সাম্প্রতিক সিরিজে খুব আত্মবিশ্বাসী, বিশেষ করে সিদরা আমিন ফর্মে আছে। ওদের ব্যাটিং নিয়ে কেমন পরিকল্পনা?

নিগার সুলতানা: ওরা খুব ভালো খেলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ব্যাটিং ইউনিট দারুণ পারফর্ম করেছে। সিদরা আমিন, মুনিবা আলী—দুজনই খুব ফর্মে আছে। এমনকি কোয়ালিফায়ারেও তারা ভালো খেলেছিল। আমরা চাই আমাদের পরিকল্পনাগুলোকে সহজ রাখি। কারণ প্রতিদিন ভিন্ন। আমরা কালকের দিনের ওপর মনোযোগ দিচ্ছি, কম ভুল করতে চাই এবং একটা ভালো ম্যাচ খেলতে চাই। দুই দলই চায় জয় দিয়ে শুরু করতে, আমরাও তাই চাই।

মানসিক দিকটা নিয়েও জানতে চাই। আপনি দলটাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন, নিজের খেলাতেও মনোযোগ দিচ্ছেন— এটা বেশ চাপের। আপনি আগেও বলেছেন এটা কতটা প্রভাব ফেলেছে। এখন দলের মধ্যে কিছু নতুন তরুণ খেলোয়াড়ও এসেছে। আপনি একজন নেত্রী হিসেবে এটা কীভাবে সামলাচ্ছেন? কোনো সহায়তা পাচ্ছেন?

নিগার সুলতানা: আপনি যাদের বললেন, তারা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছে এবং নিজেদের প্রমাণ করেছে। ডমেস্টিকেও ভালো খেলেছে। আমরা তাদের বিভিন্ন অবস্থানে প্র্যাকটিস ম্যাচে পরীক্ষা করেছি। তারা তরুণ হলেও যথেষ্ট পরিপক্ব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সুমাইয়াকে আমরা মিডল অর্ডারে পাঠাই, আর সে যেভাবে ব্যাট করলো, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা ওর নিজের। এটা পুরো দলের জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল। নিশিতা আর শর্ণা—দুজনেই অনেক সম্ভাবনাময়। স্বর্ণাকে এখনো হয়তো বিশ্ব তেমন দেখেনি, কিন্তু ও অসাধারণ প্রতিভাবান। আর নিশিতা মাত্র ১৭ বছর বয়সে যেভাবে নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছে, সেটা দেখলে বোঝা যায় সে জানে এখানে কীভাবে খেলতে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৭:০০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামীকাল কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের যাত্রা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক জানালেন, এবার তারা মানসিকভাবে আরও দৃঢ়, ব্যাটিং দুর্বলতা কাটিয়ে দলকে নতুন আত্মবিশ্বাসে গড়ে তুলতে চান। প্রথম ম্যাচেই পরিচিত প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

এবারের বিশ্বকাপে আসাটা আপনার জন্য একটু আলাদা অনুভূতি নিশ্চয়ই। ২০২২-এ অনেক কিছুই প্রথমবার হয়েছিল—প্রথম ম্যাচ, প্রথম প্রেস কনফারেন্স, প্রথম জয়। এবার দ্বিতীয়বার, কিছুটা কি সহজ মনে হচ্ছে? কেমন লাগছে এবারের টুর্নামেন্ট নিয়ে?

নিগার সুলতানা: সবচেয়ে বড় কথা, তখন থেকে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন একটা নতুন দিন, নতুন সুযোগ। আমরা চাই পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে একটা ভালো শুরু হোক। কারণ এটা আমাদের প্রথম ম্যাচ, আর এটা যদি ভালো হয়, তাহলে পুরো টুর্নামেন্টে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোনো যাবে।

প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের মতো পরিচিত প্রতিপক্ষ— এটা কি একটু সুবিধাজনক?

নিগার সুলতানা: হ্যাঁ, অবশ্যই। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। কোয়ালিফায়ারেও খেলেছি, দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও খেলেছি। ওদের সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা আছে, আমাদের সম্পর্কেও ওদের আছে। তাই এটা একটা ভালো প্রতিযোগিতা হবে বলে মনে করি।

গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে অনেক আইসিসি ইভেন্ট হয়েছে। দল হিসেবে এই ১২ মাস কেমন গেল? আর আপনি কীভাবে দলকে আবার এমন একটি বড় টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত করেছেন?

নিগার সুলতানা: দেখুন, আমরা মানসিকভাবে অনেক কাজ করেছি। কারণ আমরা জানি আমাদের দলে ম্যাচ জেতানোর মতো সামর্থ্য আছে। কিন্তু সেই বিশ্বাসটাই তৈরি করতে হতো। গত ১২ মাসে আমরা সেই বিশ্বাস তৈরিতে কাজ করেছি। আমরা ভালো খেলেছি, কিন্তু ম্যাচ জিততে পারিনি। কয়েকটা খুব কাছাকাছি ম্যাচ ছিল। এরপর আমরা ভেবেছি—কীভাবে খেললে জয় আসবে! কোয়ালিফায়ারের পর থেকেই আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক পরিশ্রম করেছি।

পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দলের বোলিং বরাবরই ভালো, কিন্তু ব্যাটিং-ই অনেক সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। ব্যাটিং ইউনিট নিয়ে কী কাজ করেছেন?

নিগার সুলতানা: সত্যি বলতে, অনেকদিন ধরেই ব্যাটিং ছিল আমাদের দুর্বলতা। বোলিং সব সময় ভালো ছিল, ফিল্ডিং-ও উন্নত হয়েছে। কিন্তু ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা পারফর্ম করতে পারিনি। সবাই বুঝেছে বিষয়টা। এরপর আমরা আলোচনা করেছি— আমরা তো পারি, তাহলে কেন পারছি না? কেন বড় স্কোর গড়তে পারছি না? এরপর আমরা কঠোর পরিশ্রম শুরু করি। নিজেদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করি—এটাই সুযোগ। কোয়ালিফায়ারে যেভাবে কষ্ট করে উঠেছি, আবার সেটা চাই না। জয় চাইলে রান তুলতেই হবে।

Jhilikঅনুশীলনে রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক

সর্বশেষ প্রস্তুতিতে কোন দিকটায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন?

নিগার সুলতানা: বিশেষভাবে স্ট্রাইক রেট নিয়ে কাজ করছি। কারণ এই ফরম্যাটে শুরুতে কেউ সময় নিয়ে খেললেও পরে গতি আনতে হয়। এখন ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে, রান না থাকলে আপনি খেলায় থাকবেন না। তাই আমরা স্ট্রাইক রেট উন্নত করেছি। এমন কিছু ব্যাটার নিয়েছি যারা স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে আবার বাউন্ডারিও মারতে পারে।

পাকিস্তানের ব্যাটিং ইউনিট সাম্প্রতিক সিরিজে খুব আত্মবিশ্বাসী, বিশেষ করে সিদরা আমিন ফর্মে আছে। ওদের ব্যাটিং নিয়ে কেমন পরিকল্পনা?

নিগার সুলতানা: ওরা খুব ভালো খেলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ব্যাটিং ইউনিট দারুণ পারফর্ম করেছে। সিদরা আমিন, মুনিবা আলী—দুজনই খুব ফর্মে আছে। এমনকি কোয়ালিফায়ারেও তারা ভালো খেলেছিল। আমরা চাই আমাদের পরিকল্পনাগুলোকে সহজ রাখি। কারণ প্রতিদিন ভিন্ন। আমরা কালকের দিনের ওপর মনোযোগ দিচ্ছি, কম ভুল করতে চাই এবং একটা ভালো ম্যাচ খেলতে চাই। দুই দলই চায় জয় দিয়ে শুরু করতে, আমরাও তাই চাই।

মানসিক দিকটা নিয়েও জানতে চাই। আপনি দলটাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন, নিজের খেলাতেও মনোযোগ দিচ্ছেন— এটা বেশ চাপের। আপনি আগেও বলেছেন এটা কতটা প্রভাব ফেলেছে। এখন দলের মধ্যে কিছু নতুন তরুণ খেলোয়াড়ও এসেছে। আপনি একজন নেত্রী হিসেবে এটা কীভাবে সামলাচ্ছেন? কোনো সহায়তা পাচ্ছেন?

নিগার সুলতানা: আপনি যাদের বললেন, তারা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছে এবং নিজেদের প্রমাণ করেছে। ডমেস্টিকেও ভালো খেলেছে। আমরা তাদের বিভিন্ন অবস্থানে প্র্যাকটিস ম্যাচে পরীক্ষা করেছি। তারা তরুণ হলেও যথেষ্ট পরিপক্ব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সুমাইয়াকে আমরা মিডল অর্ডারে পাঠাই, আর সে যেভাবে ব্যাট করলো, মনে হচ্ছিল ম্যাচটা ওর নিজের। এটা পুরো দলের জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল। নিশিতা আর শর্ণা—দুজনেই অনেক সম্ভাবনাময়। স্বর্ণাকে এখনো হয়তো বিশ্ব তেমন দেখেনি, কিন্তু ও অসাধারণ প্রতিভাবান। আর নিশিতা মাত্র ১৭ বছর বয়সে যেভাবে নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছে, সেটা দেখলে বোঝা যায় সে জানে এখানে কীভাবে খেলতে হয়।