“শহীদ হয়ে যাব”, বন্ধুদের এ কথা বলেই বিক্ষোভে যোগ দেন সাজিদ
- আপডেট সময় : ০৫:৫০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৮১ বার পড়া হয়েছে
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বিজয়নগরের তেতৈয়া গ্রাম। বি-বাড়িয়া জেলায় সবুজের চাদরে মুড়ানো অপরূপ এ গ্রামটির নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়। এই গ্রামেই ২০০৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাজিদুর রহমান ওমর। সাজিদের মনটাও ছিল চির সবুজ। তার বাবা শাহজাহান আলী পেশায় একজন পত্রিকা ব্যবসায়ী। মা পারভীন আক্তার গৃহকর্ত্রী। ছেলেবেলা থেকে পরিবারের অভাব-অনটন দেখে বড় হয় সাজিদ। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। তখন থেকে পণ করেন বড় হলে পরিবারের আর্থিক সহায়ক হিসেবে প্রধান ভূমিকা রাখবেন।
সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য বসতভিটা ছেড়ে ঢাকা চলে এসেছিলেন সাজিদের বাবা। ডেমরায় জামেয়া আরাবিয়া আনোয়ারুল রহমানিয়া হাফেজি মাদরাসা থেকে কুরআনে হাফেজ হন সাজিদ। এরপর সুন্না টেংরা দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হন সাজিদ। দুই বোনের বিয়েতে বাবার ঋণ আরো বেড়ে যায়। সাজিদ তখন অষ্টম শ্রেণীর সামান্য একজন ছাত্র। পরিবারের অভাব কাটাতে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে গেলেও কোর্স ফি দিতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি তিনি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পুরনো বই ও ইউটিউবে ফ্রি ক্লাস দেখে দেখে অবিচল প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। মেগাবাইট কেনার পয়সা নেই, বাবার মোবাইল ফোন নিয়ে বন্ধুর বাড়ি থেকে ওয়াইফাই সংযোগ করেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের আদ্যপান্ত শেষ করে আইটি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। ফাইবার, আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলে নিয়মিত বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের সাথে মিটিং করে অর্ডার পেতে থাকেন। ধীরে ধীরে বাবার সকল ঋণ পরিশোধ করেন। বড় ভাইয়ের কলেজের অ্যাডমিশন ফি দিয়ে দেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার আসতে থাকে। নিউ ড্রিম অনলাইন নামের একটি ব্রডব্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি নেন। প্রথম মাসের বেতনের টাকা দিয়ে মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরে প্রথম মিষ্টিমুখ করান মাকে। এরপর পদোন্নতি হয় সাজিদের।
বন্ধুদের সাথেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সাজিদ। কোনোভাবেই অন্যায়, নির্যাতন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকেননি সাজিদ। বলেননি আন্দোলনে গেলে আমার পরিবার কে দেখবে।
সেদিন ছিল ২১ জুলাই, ২০২৪। জোহরের নামাজ শেষ করে যাত্রাবাড়ীর সাইন বোর্ড এলাকায় আন্দোলনে শামিল হন সাজিদ। চার দিকে পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে সামনে অগ্রসর হতে থাকেন তিনি। সাজিদের বাল্যবন্ধু হিমেল তাকে সামনে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু সাজিদ বারবার বলতে থাকে, ‘আমি শহীদ হয়ে যাব। দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করব। চোখের সামনে তারই মতো অসংখ্য তরুণ পুলিশ ও ঘাতক আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করছিল। এসব দেখে পিছপা হওয়ার কোনো উপায় ছিল না সাজিদের। এমন সময় ঘাতক পুলিশের একটি গুলি সাজিদের মাথায় এসে আঘাত হানে। মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায় বন্ধুরা। অবস্থার অবনতি হলে তিন দিন আইসিইউতে ভর্তি করা হয় তাকে। এবং সেখানেই গত ২৪ জুলাই, বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন শহীদ সাজিদুর রহমান ওমর।
সাজিদের মা প্রতিনিয়ত বাতাসে সন্তানের গন্ধ অনুভব করেন। যেন একটু পর কলিংবেল বাজবে, অপেক্ষা করেন। রোজ কল্পনা করেন তার সাজিদ বাইরে থেকে আসবে, আর চিৎকার করে মা বলে ডাকবে। চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ে। এভাবেই কাটতে থাকে দিনের পর দিন।
সুত্র : নয়া দিগন্ত








































