সাংবাদিকতা নাকি সামাজিক প্রতারণা ?
- আপডেট সময় : ০৭:৪৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৬৬৮ বার পড়া হয়েছে
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইউটিউব—এসবের ব্যাপক প্রসারে এক নতুন ধরণের ‘সাংবাদিক’ শ্রেণির উত্থান ঘটেছে। এদের অনেকেই নেই কোনো প্রশিক্ষণের আওতায়, নেই স্বীকৃত কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে সংযুক্তি, তবুও বুক চিতিয়ে পরিচয় দেন—আমি সাংবাদিক। প্রশ্ন জাগছে, এরা কি সত্যিই সংবাদকর্মী, না কি শুধুই ‘ফেসবুক সাংবাদিক’ নামক এক সামাজিক প্রতারণার রূপ ?
কেমন এই ‘ফেসবুক সাংবাদিকতা ?
প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এখন যে কেউ একটি ফেসবুক পেজ খুলে তাতে “নিউজ”, “২৪”, “টিভি” শব্দ জুড়ে দিয়ে রাতারাতি হয়ে যেতে পারেন “চিফ রিপোর্টার”। এরপর মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সরাসরি ফেসবুক লাইভে গিয়ে কথিত ‘সংবাদ পরিবেশন’ শুরু করেন। অনেকেই নিজের বানানো আইডি কার্ড ঝুলিয়ে ঢুকে পড়েন সরকারি-বেসরকারি অফিসে, এমনকি থানা বা আদালতেও। কোনো পেশাদারিত্ব ছাড়াই এসব কর্মকাণ্ড চলতে থাকায় প্রকৃত সাংবাদিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে গণমাধ্যমে একধরনের অনাস্থা।
সংবাদ সংগ্রহ বা পরিবেশনের ন্যূনতম নীতি-নৈতিকতাও মানা হচ্ছে না।
ভয়াবহ প্রতারণা:
সাংবাদিকতার নামে ব্যবসা অনেকেই সংবাদ প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। কেউ কেউ হুমকি দেন—ভাইরাল করে দিব, নিউজ করে দেব।
সাংবাদিক নেতারা কি বলছে :
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাংবাদিকতার কোনো প্লাটফর্ম নয়। এখানে সাংবাদিকতা করার কোনো সুযোগ নেই। এটা কিছু তথ্য প্রচারের মাধ্যম হতে পারে। সাংবাদিকতা করতে হলে বিশেষ যোগ্যতা ও দক্ষতা লাগে। নিয়ম আছে, নীতি আছে। সাংবাদিকদের পেশাদাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা ও দায়বদ্ধতা থাকে। জবাবদিহিতা থাকে। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি প্রসারের কল্যাণে কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সাংবাদিক পরিচয়ে অপব্যাবহার করছে, স্রেফ ভাওতাবাজি-ধান্দাবাজি চলছে।
ইদানিং তা অনেক বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন না কারা সাংবাদিক, কোনটি সাংবাদিকতা। এই গোষ্ঠীর কাছে দেশের সাধারণ মানুষ তো বটেই সব শ্রেণির কিছু মানুষ অপতথ্য ও অপপ্রচারে শিকার হচ্ছেন। এমনকি প্রতারিতও হচ্ছেন। এতে মূল ধারার সাংবাদিকতা ঝুঁকির মুখে ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এ থেকে রেহাই পেতে সবাইকে সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, পাশাপাশি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের একটি নির্দেশনার মধ্যে আনার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। উপসংহার: ডিজিটাল যুগে যেকোনো মানুষ তথ্য ছড়াতে পারে, সেটি তার অধিকার। কিন্তু সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা, হয়রানি, কিংবা চাঁদাবাজি—এসব কিছুই সমাজের জন্য হুমকি। ব্যক্তি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা সাংবাদিকতা পেশা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের সত্য জানার অধিকার।
সাংবাদিকতা হোক সত্য ও দায়িত্বের প্রতিচ্ছবি, প্রতারণার নয়।












































