নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ঢাকার মেট্রোরেল
- আপডেট সময় : ০৮:৪০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫২৭ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় আবারও মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণকে প্রশ্নের মুখে ফেলা হলো। রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেটে একটি বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ায় আবুল কালাম (৩৬) নামের একজন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে একই এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল, তবে সেবার কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনা ঘটে ৪৩৩ নম্বর পিলারের পাশে, যা ফার্মগেট স্টেশনের ঠিক পশ্চিম দিকে। দুর্ঘটনার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানীর যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে বিপুল ভোগান্তি দেখা দেয়। সন্ধ্যায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত আংশিক মেট্রোরেল চলাচল পুনরায় শুরু হয়।
রক্ষণাবেক্ষণ এবং নকশায় ত্রুটি সন্দেহ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক পরিচালক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক বলেন, মেট্রোরেলের পিলারে কম্পনজনিত ভার তৈরি হয় এবং নাট-বল্টু নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিয়ারিং প্যাডটি পিলার ও ভায়াডাক্টের সংযোগ স্থলে বসানো হলেও তা নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি দাবি করেন, এখানে নির্মাণত্রুটি রয়েছে এবং কনসালট্যান্টদের দায় নির্ধারণ করা উচিত।
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের পরীক্ষায় দেখা গেছে, উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কয়েকটি বিয়ারিং প্যাড মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়নি। সেগুলো সরবরাহ করেছিল ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। তবে তা প্রতিস্থাপন করা হয়নি।
বিয়ারিং প্যাডের গুরুত্ব
বিয়ারিং প্যাড হলো মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত উপকরণ। এটি কংক্রিটের পিলার ও উড়ালপথের স্প্যানের মাঝে বসানো থাকে। বিশেষ রাবার ও স্টিলের তৈরি এই প্যাড ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট উল্লম্ব চাপ শোষণ করে এবং চাপকে সমানভাবে পিলারের ভিত্তির দিকে ছড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে ভায়াডাক্টের অনুভূমিক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তদন্ত ও পরিবারকে সহায়তা
ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক হলেন মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ। কমিটিতে বুয়েট ও সামরিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (এমআইএসটি) বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। কমিটি দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সরকার নিহতের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা এবং দাফন-কাফনের খরচ বহন করবে। এছাড়া পরিবারে যদি কেউ কর্মক্ষম থাকে, তাকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
আংশিক মেট্রোরেল চলাচল পুনরায় শুরু
মৃত্যুর ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। পরে বিকেল ৩টায় আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত চলাচল শুরু হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত চলাচল পুনরায় চালু হয়।
ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পে ২০১২ সালে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২১,৯৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৩,৪৭২ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে প্রায় ১,৫০০-১,৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়






























