ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বপ্ন একটাই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫১৯ বার পড়া হয়েছে
দেশবর্ণ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সীমান্তঘেঁষা কুতুপালংয়ের আজুখাইয়া ও লম্বাশিয়া গ্রাম। পাহাড় আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘেরা এই জনপদে ফুটবলের জাদু ছড়িয়ে স্বপ্ন বুনছে দুই কিশোরী—আয়েশা বেগম ও ইয়াছমিন আক্তার। দু’জনের চোখে একটাই স্বপ্ন—একদিন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামা। সেই লক্ষ্যেই তাদের তীব্র ইচ্ছা বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ভর্তি হওয়া।

৯ বছর বয়সে ২নং উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রথম ফুটবলে পা রাখেন আয়েশা। বর্তমানে তিনি কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। দিনমজুর পিতা নবী আলম ও গৃহিণী মা চেমন খাতুনের সংসারে অভাব থাকলেও থেমে নেই তার পথচলা। স্কুল টিমের হয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজর কেড়েছে সে। আয়েশার কথায়, “ফুটবল খেলতে পারলেই মন ভালো হয়ে যায়। রিপা আপুর মতো জাতীয় দলে খেলতে চাই। এজন্য বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়াই এখন সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।”

অন্যদিকে লম্বাশিয়ার ইয়াছমিন আক্তার মাঠে নামলেই যেন বদলে যান। সপ্তম নম্বর জার্সি গায়ে রোনালদোর গতিতে দৌড়, নিখুঁত পাস আর গোলের সুযোগ তৈরি করেন তিনি। দিনমজুর পিতা ছৈয়দ আলম ও গৃহিণী মা জুহুরা বেগমের পরিবারে সচ্ছলতা না থাকলেও মেয়ের খেলাধুলার পথ রুখে দাঁড়ায়নি কেউ। ইয়াছমিন বলেন, “স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে মাঠে নামবো।”

বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক মুক্তা সেন বলেন, “ইয়াছমিনের শৃঙ্খলা, পাসিং এবং গতির দক্ষতা দেখে বোঝা যায়—সে অনেক দূর যেতে পারবে।”

আয়েশা ও ইয়াছমিনের প্রতিভায় মুগ্ধ স্থানীয়রা। ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, “আগে মেয়েরা খেলাধুলায় এগোতে সংকোচ বোধ করত। এখন আয়েশা ও ইয়াছমিনরা অন্যদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে। সহযোগিতা পেলে তারা জাতীয় দলেও জায়গা করে নিতে পারবে।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, “আয়েশা ও ইয়াছমিন আমাদের গর্ব। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের আলাদা প্রশিক্ষণ ও সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

দৈনন্দিন কষ্ট, দারিদ্র্য, সামাজিক বাধা—কিছুই তাদের স্বপ্নকে থামাতে পারেনি। সকালে স্কুল, বিকেলে ফুটবল অনুশীলন—এ যেন তাদের রুটিন। যেখানে অনেক শিশুর জীবন শুরুতেই থেমে যায়, সেখানে এই দুই কিশোরী নিজেদের পথ তৈরি করছে সাহস ও পরিশ্রমে।

তবে থেকে যায় প্রশ্ন—এই দুই ক্ষুদে ফুটবলারের বিকেএসপিতে ভর্তির স্বপ্ন কি সত্যিই পূরণ হবে ?
তাদের চোখে এখনও জ্বলজ্বল করছে সেই প্রত্যাশার আলো—একদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের পতাকা উড়ানোর গর্বে বুক ভরে উঠবে তাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্বপ্ন একটাই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামা

আপডেট সময় : ১২:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

সীমান্তঘেঁষা কুতুপালংয়ের আজুখাইয়া ও লম্বাশিয়া গ্রাম। পাহাড় আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘেরা এই জনপদে ফুটবলের জাদু ছড়িয়ে স্বপ্ন বুনছে দুই কিশোরী—আয়েশা বেগম ও ইয়াছমিন আক্তার। দু’জনের চোখে একটাই স্বপ্ন—একদিন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামা। সেই লক্ষ্যেই তাদের তীব্র ইচ্ছা বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ভর্তি হওয়া।

৯ বছর বয়সে ২নং উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রথম ফুটবলে পা রাখেন আয়েশা। বর্তমানে তিনি কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। দিনমজুর পিতা নবী আলম ও গৃহিণী মা চেমন খাতুনের সংসারে অভাব থাকলেও থেমে নেই তার পথচলা। স্কুল টিমের হয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজর কেড়েছে সে। আয়েশার কথায়, “ফুটবল খেলতে পারলেই মন ভালো হয়ে যায়। রিপা আপুর মতো জাতীয় দলে খেলতে চাই। এজন্য বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়াই এখন সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।”

অন্যদিকে লম্বাশিয়ার ইয়াছমিন আক্তার মাঠে নামলেই যেন বদলে যান। সপ্তম নম্বর জার্সি গায়ে রোনালদোর গতিতে দৌড়, নিখুঁত পাস আর গোলের সুযোগ তৈরি করেন তিনি। দিনমজুর পিতা ছৈয়দ আলম ও গৃহিণী মা জুহুরা বেগমের পরিবারে সচ্ছলতা না থাকলেও মেয়ের খেলাধুলার পথ রুখে দাঁড়ায়নি কেউ। ইয়াছমিন বলেন, “স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে মাঠে নামবো।”

বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক মুক্তা সেন বলেন, “ইয়াছমিনের শৃঙ্খলা, পাসিং এবং গতির দক্ষতা দেখে বোঝা যায়—সে অনেক দূর যেতে পারবে।”

আয়েশা ও ইয়াছমিনের প্রতিভায় মুগ্ধ স্থানীয়রা। ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, “আগে মেয়েরা খেলাধুলায় এগোতে সংকোচ বোধ করত। এখন আয়েশা ও ইয়াছমিনরা অন্যদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে। সহযোগিতা পেলে তারা জাতীয় দলেও জায়গা করে নিতে পারবে।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, “আয়েশা ও ইয়াছমিন আমাদের গর্ব। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের আলাদা প্রশিক্ষণ ও সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

দৈনন্দিন কষ্ট, দারিদ্র্য, সামাজিক বাধা—কিছুই তাদের স্বপ্নকে থামাতে পারেনি। সকালে স্কুল, বিকেলে ফুটবল অনুশীলন—এ যেন তাদের রুটিন। যেখানে অনেক শিশুর জীবন শুরুতেই থেমে যায়, সেখানে এই দুই কিশোরী নিজেদের পথ তৈরি করছে সাহস ও পরিশ্রমে।

তবে থেকে যায় প্রশ্ন—এই দুই ক্ষুদে ফুটবলারের বিকেএসপিতে ভর্তির স্বপ্ন কি সত্যিই পূরণ হবে ?
তাদের চোখে এখনও জ্বলজ্বল করছে সেই প্রত্যাশার আলো—একদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের পতাকা উড়ানোর গর্বে বুক ভরে উঠবে তাদের।